সিংকিয়াং থেকে ককেশাস | আবুল আসাদ

সিংকিয়াং থেকে ককেশাস | আবুল আসাদ
Free

উরুমচির ইবনে সাদ রোড ধরে পুর্বদিকে তীব্র গতিতে এগিয়ে চলছে শক্ত সমর্থ একটা হাই ল্যান্ডার জীপ।
সন্ধ্যার অন্ধকার তখন রাস্তায় নেমে এসেছে। রাস্তার বিজলিবাতিগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সৃষ্টি হয়েছে শহর-জীবনের এক সনাতন আলো আঁধারী। অভিজাত আবাসিক এলাকা এটা। রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। ফুল স্পীডে এগিয়ে চলেছে আহমদ মুসার জীপ। জীপে মোট পাঁচটি সিট। সামনে দু’টা, পেছনে তিনটা। ড্রাইভিং সিটে বসেছে আহমদ ইয়াং তার পাশেই আহমদ মুসা। পিছনে হাসান তারিক এবং মা-চু বসেছে।
আহমদ মুসা ঘড়ির রেডিয়াম ডায়ালের দিকে একনজর দেখলেন, সন্ধ্যা ৭ টা। আহমদ মুসা চিন্তা করলেন, ওয়াংহুয়া তার নতুন বসতিকামী কাফেলা নিয়ে নিশ্চয়ই দিনে রওয়ানা দিয়েছে। মধ্য রাত্রির নীরব প্রহরে শিহেজি উপত্যকায় পৌছতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং উরুমচিতে ওদের রাত দশটায় অবশ্যই পৌঁছা চাই। কিন্তু ওদের আটকাতে হবে উরুমচি থেকে অনেক দূরে বিজন পাহাড়ি অঞ্চলে।
কানশু প্রদেশ থেকে যে উরুমচি হাইওয়ে এগিয়ে এসেছে সেই পথেই ওয়াংরা আসছে।
আহমদ মুসার মানস দৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে উরুমচি থেকে কানশু পর্যন্ত পথের দৃশ্য। কৈশোরে এই পথে সে একাধিকবার উরুমচি এসেছে। গোটা পথটাই তার চোখের সামনে এখনও জ্বল জ্বল করছে। পথটা তখনও পাকা হাইওয়ের রুপ নেয়নি। কাঁকর বিছানো সে পথে উট চলতো, ঘোড়ার গাড়িও চলতো অনেক। তখনকার চেয়ে এখনকার গতি অনেক বেড়েছে। ধীরে-সুস্থে গিয়েও একশ মাইল দূরের আল-খলিল উপত্যকায় রাত নটার মধ্যে তারা পৌছতে পারবে। তিয়েনশানের পাহাড়ের একটা ছোট দক্ষিণমূখী শাখায় এই আল-খলিল উপত্যকা। উরুমচি হাইওয়েটি পাহাড়ের একটি সংকীর্ণ গিরিপথ দিয়ে এই উপত্যকা অতিক্রম করে এসেছে। ঐ গিরিপথ হাইওয়ে দুপারে কয়েক মাইল বিস্তৃত উঁচু পাহাড়ের দেয়াল। ওয়াংদের আগ্রাসী কাফেলাকে আটকাবার উপযুক্ত জায়গা এটাই। আহমদ মুসা ভেবে-চিন্তে এই স্থানটা নির্বাচন করেছেন। পরিকল্পনা অনুসারে রাত নটার মধ্যেই আল-খলিল উপত্যকায় তাদের পৌছতে হবে। ওয়াংরা ওখানে পৌছার আগে তাদের অনেক কাজ আছে সেখানে।
আহমদ মুসার চিন্তা হোঁচট খেল। পেছন থেকে মা-চুর বেসুরো কন্ঠ ধ্বনিত হলো, সামনেই বাঁ দিকে বাঁক নেবেন। বাঁ দিকের লেনটা হয়ে পিয়াও লিন রোডে পড়া যাবে।
তোমার পিয়াও লিন রোড কি আমাদের উরুমচি হাইওয়েতে নিয়ে যাবে? বললেন আহমদ মুসা।
না স্যার। পিয়াও লিন রোড থেকে পূর্ব দিকে এগিয়ে লিও শাও চি স্কোয়ার হয়ে আমরা পিং রোডে পড়ব, সেখান থেকে উংফু, তারপর…….
আহমদ মুসা তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললেন, তারপর থাক। মাথায় ওসব থাকবে না। তুমি আহমদ ইয়াংকে সাহায্য কর।
একটু দম নিয়ে আহমদ মুসা বললেন, মা-চু তুমি আল-খলিল চেন?
চিনব না কেন? আল-খলিল তো উরুমচির দরজা। কিন্তু ওর নাম এখানে আল-খলিল নয়।
সাংস্কৃতিক বিপ্লব ওর নাম তো দিয়েছে ‘মাও ভ্যালি’ সেই কবে। আপনি আল-খলিলের নাম জানলেন কি করে?
জানব না কেন মা-চু? আমি কি সিংকিয়াং-এর মানুষ না?
মনে ছিল না স্যার। কিছুটা কাঁচু-মাচু হয়ে বলল মা-চু।
আচ্ছা মা-চু, আল-খলিল গিরিপথে আমরা ওয়াং হুয়ার মুখোমুখি দাঁড়ালে কেমন হবে?
খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল মা-চুর। বলল ওখানে উপযুক্তভাবে দাঁড়াতে পারলে ওয়াং হুয়াদের কয়েকদিন তো ঠেকিয়ে রাখা যাবেই।
উপযুক্তভাবে বলতে তুমি কি বুঝাতে চাচ্ছ?
স্যার, উরুমচি হাইওয়ের আল-খলিল গিরিপথ থেকে দক্ষিণ দিকে পাহাড়ের দেয়াল গেছে মাইল চারেকের মত, আর উত্তর দিকে গেছে পাঁচ মাইল। গিরিপথে বাধা পেলে খাড়া পাহাড় ডিঙিয়ে ওদের পক্ষে মালসামান নিয়ে আল-খলিল উপত্যকায় নামা সম্ভব নয়। বিকল্প হিসেবে ওরা চার-পাঁচ মাইল পথ অতিক্রম করে উত্তর বাঁ দক্ষিণ দিক দিয়ে পাহাড় ঘুরে এপারের আল-খলিল উপত্যকায় নামার চেষ্টা করবে। এ চেষ্টার পথ যদি বন্ধ করা যায় তাহলে ওয়া আটকা পড়ে যাবে। হতবুদ্ধি অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে নতুন পথের সন্ধান করতে ওদের অবশ্যই কয়েকদিন কেটে যাবে।

The author saimumseries has offered the item for free, you can now download it.

Download
License Option
Quality checked by SoaTube.com
Full Documentation
Future updates
Author Support
2 Downloads

SaimumSeries's items

We use cookies to personalize your experience. By continuing to visit this website you agree to our use of cookies

More