সিটনিক নদীর পশ্চিম তীরের হাইওয়ে ধরে ছুটে চলছিল মাজুভের জীপ।
মনাস্তিরের কাছাকাছি আসার পর হাইওয়েটি বেঁকে পশ্চিম দিকে চলে গেছে। এখানে মাজুভদের সিটনিক পার হয়ে সিটনিকের পূর্ব তীরের হাইওয়ে ধরে মনাস্তির পৌঁছতে হবে।
হাইওয়ের সেই বাঁকে এসে মাজুভের জীপ থামল।
নদী পার হবার জন্যে রয়েছে ব্রীজ।
ব্রীজটির বয়স বেশি নয়, কিন্তু ভূমিকম্পের ফলে ব্রীজে মারাত্মক ফাটল দেখা দেয়ার পর ব্রীজের উপর দিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। পণ্যবাহী ওয়াগন, ট্রাক পারাপার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওগুলো এখন ফেরিতে পারাপার করে। যাত্রীবাহী বাস ও গাড়িগুলো ব্রীজ পার হওয়ার আগে গাড়িগুলো খালি করে দেয়। লোকদের হেটে ব্রীজ পার হতে হয়।
গাড়ি থামাল আহমাদ মুসা, হাসান সেনজিক এবং নাতাশা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল।
মাজুভ ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে ব্রীজে উঠল।
মাজুভের গাড়ির আগে আরও একটা গাড়ি।
ধীরে ধীরে গাড়ি চলছে। লোকেরা গাড়ির দু’পাশ দিয়ে গাড়ির প্রায় সাথেই চলতে পারছে।
মাজুভ গাড়ি চালাচ্ছিল। তার দৃষ্টি ছিল সামনে।
হঠাৎ গাড়ির সামনে একজনের দিকে দৃষ্টি পড়তেই চমকে উঠল মাজুভ।
লোকটি গাড়ির সামনে রাস্তার একপাশ দিয়ে পথ চলছিল। দীর্ঘদেহী পেশি বহুল। চলার মধ্যে একটা ঔদ্ধত্য ভাব। দেখলেই বুঝা যায়, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় বড় ওস্তাদ লোক।
মাজুভ লোকটিকে দেখে যখন চমকে উঠেছে, ঠিক তখন লোকটিও পেছনে ফিরে তাকিয়েছে। লোকটির দৃষ্টিও এসে পড়ল সরাসরি মাজুভের উপরেই। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি থমকে দাড়াল। তার চোখে বিস্ময়। মাজুভের চমকে উঠার সাথে ছিল অস্থির ভাব, আর লোকটির বিস্ময়ের সাথে রয়েছে আনন্দ।
লোকটি দাঁড়িয়েই ছিল। তার মুখে হাসি।
মাজুভের গাড়ি পাশে আসতেই বলল, কি মিঃ মাজুভ আপনি ও বুঝি কসভো যাচ্ছেন?
লোকটি ইয়েলেস্কু। কনস্টানটাইনের দুর্ধর্ষ সহকারী, তার সব অভিযানের সাক্ষী।
মাজুভের মুখটা স্বাভাবিক। কিন্তু মনে তার কাঁপুনি ধরে গেছে ভয়ে। ভয়টা তার নিজের জন্য নয়। এখনি হাসান সেনজিক ইয়েলেস্কুর নজরে পড়ে যাবে, তখন কি ঘটবে এই ভয়ে।
হাসান সেনজিক এখনও ইয়েলেস্কুর নজরে পড়েনি। কারন হাসান সেনজিকরা যাচ্ছে গাড়ির ওপাশ অর্থাৎ উত্তর পাশ দিয়ে আর ইয়েলেস্কু যাচ্ছে দক্ষিণ পাশ দিয়ে।
মাজুভ মুখে হাসি টানার চেষ্টা করে বলল, হ্যাঁ মিঃ ইয়েলেস্কু, আমিও কসভোর পথে।
-ভালই হলো। আমার সাথে জর্জ এসেছে। আমরা ‘মিলেশ’ এর জন্মদিন এবার কসভোতে আনন্দের সাথেই সেলিব্রেট করতে পারব। হাসিতে মুখটি উজ্জ্বল করে বলল ইয়েলেস্কু।
ইয়েলেস্কুর কথা শোনার পরই শুধু মাজুভের খেয়াল হল, আজ মিলেশ-এর জন্মদিন। এই বিপদটা না ঘটলে মাজুভ মনে মনে হাসত এই বলে যে, মিলেশ-এর জন্মদিনে মাজুভের শুভ সংবাদটা মিলেশের বিদেহী আত্মাকে শোনানো খুবই ভাল হবে। কিন্তু এখন সে সব ভাবার অবস্থা মাজুভের নেই। তার সব চিন্তা এখন হাসান সেনজিককে নিয়ে। কি করে তাকে রক্ষা করবে।
-ঠিক বলেছেন মিঃ ইয়েলেস্কু। জর্জ কি গাড়িতে? মুখ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল মাজুভ।
জর্জ মিশেল বাহিনীর খুনে গ্রুপের একজন সদস্য। আদেশ পালন ছাড়া আর সে কিছু বুঝে না। সর্বক্ষণ সে ইয়েলেস্কু অথবা কনস্টানটাইনের কাছেই ঘুর ঘুর করে। লোক হত্যা তার কাছে পিঁপড়ে হত্যার চেয়ে বেশি কিছু নয়।
-হ্যাঁ, সে গাড়ি চালাচ্ছে। ড্রাইভার নেইনি। জানেন, মিঃ মাজুভ, লিডারও আসবেন সব ঠিক হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে একটা ঝামেলায় তার প্রোগ্রাম বাতিল হলো। শেষে আমাকেই আসতে হলো তার প্রতিনিধিত্ব করতে ‘মিলেশ’-এর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে।
ঝামেলার কথা শুনে মাজুভের বুকটা কেঁপে উঠল। এখনই সে হয়ত হাসান সেনজিক এর প্রশ্ন তুলবে। ‘মিলেশ’-এর ঝামেলা, বলতে এখন হাসান সেনজিককেই বুঝায়।
গাড়ি দুটো ব্রীজ পার হয়ে এসেছে। আগের গাড়িটা থেমে গেছে। আগের গাড়িটাই ইয়েলেস্কুর গাড়ি, জর্জ চালাচ্ছে।
আগের গাড়ি থামার সাথে সাথে মাজুভও গাড়ি থামিয়ে দিল।
মাজুভ সর্বান্তকরণে কামনা করছে ইয়েলেস্কু তাড়াতাড়ি উঠে যাক তার গাড়িতে এবং হাসান সেনজিক তার নজরে পড়া থেকে রক্ষা পাক।
গাড়ি থামলে ইয়েলেস্কু মাজুভকে বলল, মিঃ মাজুভ, তাহলে আসুন আমি গাড়িতে উঠি। আপানার সাথে আর কে আছে?
মাজুভের মুখ কালো হয়ে উঠল। কেঁপে উঠল তার বুক, গলা তার যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকনো কণ্ঠে বলল, আমার স্ত্রী।
কথা শেষ করতে পারল না মাজুভ। আর কথা শেষ করতে দিলও না ইয়েলেস্কু। হৈ হৈ করে উঠল সে। বলল, ভাবি সাথে আছে এতক্ষণ বলেননি! দেখা করেই গাড়িতে উঠি, কি বলবেন তাছাড়া উনি।
The author saimumseries has offered the item for free, you can now download it.
DownloadPublished:
05 December, 2024
Category: