ককেশাসের পাহাড়ে | আবুল আসাদ

ককেশাসের পাহাড়ে | আবুল আসাদ
Free

আরাকস হাইওয়ে ধরে ছুটে চলছিল আহমদ মুসার জীপ।
বাকু থেকে পনের মাইল পশ্চিমে এসে নগরন-কারাবাখ সড়ক উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে গেছে। এখান থেকে আরেকটা হাইওয়ে বেরিয়ে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমে একেবারে আরাকস নদীর তীর ঘেঁষে। এটাই আরাকস হাইওয়ে। আরাকস নদীর তীর ঘেঁষে এই হাইওয়ে এগিয়ে গেছে ইয়েরেভেনের পাশ দিয়ে আরও উত্তরে। ইয়েরেভেন পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচশ’ মাইলের এই সফর।
আরাকস ও কুরা বিধৌত সবুজ উপত্যকার মধ্যে দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল আহমদ মুসার জীপ।
নগরন-কারাবাখ সড়ক হয়ে ইয়েরেভেন অনেক সংক্ষিপ্ত পথ। প্রায় ১শ’ মাইলের মত কম। কিন্তু তবু আহমদ মুসারা আরাকস হাইওয়েই বেছে নিয়েছে। নগরন-কারাবাখ সড়কের উপর হোয়াইট ওলফ নাকি হঠাৎ করে খুব নজর রাখতে শুরু করেছে। ইয়েরেভেন থেকে আসার পথে ওসমান এফেন্দীর গাড়ি তিনবার চেক করা হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কি পরিচয়, কোথায় যাবে, কেন যাবে ইত্যাদি। যারা চেক করেছে তারা স্বেচ্ছাসেবকের ব্যাজ পরা। কিন্তু ওসমান এফেন্দীর বুঝতে কষ্ট হয়নি, কোন রুটিন চেক এসব নয়। স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে স্টেনগান থাকে না, তাদের আচরণও অমন রুক্ষ্ম ও অসৌজন্যমূলক হয় না। ওসমান এফেন্দী যুক্তি দেখিয়েছে, আরাকস হাইওয়ে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হবে। পাহাড়ের দেয়ালের পাশ ঘেঁষে সুদৃশ্য উপত্যকা বেয়ে প্রবাহিত সুন্দর নদী আরাকস-এর তীর বরাবর আরাকস হাইওয়েতে সাধারণত বিদেশি পর্যটকদেরই ভিড় থাকে বেশি। এসব চিন্তা করেই ওসমান এফেন্দী আরাকস হাইওয়েই পছন্দ করেছে।
আহমদ মুসার গাড়ি প্রায় তীর বেগে দেড়শ’ মাইল রাস্তা পেরিয়ে এল। রাস্তা প্রায় ফাঁকা, কোনই ঝামেলা হয়নি। আজারবাইজান সীমান্ত পেরুবার সময় একবার রুটিন চেক হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত পেরুবার পর আর্মেনিয়া প্রবেশের সময় একটু বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আর্মেনীয় পুলিশরা। এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ নাকি আগে ছিল না। কিন্তু হোয়াইট ওলফের তৎপরতা শুরু হবার পর এটা হচ্ছে। নানা ঘটনা ও গুজবে আতংকিত হয়ে অনেক আর্মেনীয় মুসলিম পরিবার না কি ইরান ও তুরস্কে প্রবেশ করেছে। এতে আর্মেনিয়ার বদনাম হচ্ছে। এজন্যে আর্মেনীয় পুলিশরা ইরান ও তুরস্ক সীমান্ত বরাবর এখন একটু বেশি নজর রাখছে। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে সাথে থাকলে না কি এ সীমান্ত পথে কাউকে চলতেই দিচ্ছে না। আহমদ মুসারা সে ক্যাটেগরিতে না পড়ায় একটু জিজ্ঞাসাবাদ বেশি করলেও বেশিক্ষণ তাদের আটকায়নি।
আরও ৫০ মাইল পেরুবার পর আগারাক শহর। আরাকস নদী-তীরের শিল্প নগরী। বলা যায় দক্ষিণ আর্মেনিয়ার প্রধান নগরী।
নগরীর পূর্ব প্রান্তে পাহাড়ের দেয়াল। দেয়ালটি নেমে গেছে একেবারে নদীর পানিতে। পাহাড়ে সুড়ঙ্গ করে আরাকস হাইওয়ে এগিয়ে নেয়া হয়েছে।
পাহাড়ের উপরিভাগ বরফে সাদা। নিচের অংশে সবুজের সমারোহ। একদম পাহাড়ের গোড়ায় গাছগুলো বেশ বড়।
সুড়ঙ্গের মুখ দু’শ গজের মত দূরে তখন। মাত্র ৭০ কিলোমিটার বেগে বলা যায় অত্যন্ত ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে আহমদ মুসার জীপ। সুড়ঙ্গের ভেতরটা অন্ধকার। দূর থেকে সুড়ঙ্গের ভেতরের বিদ্যুৎ বাতিগুলোকে মনে হচ্ছে বাঘের চোখের মত।
আহমদ মুসা তার সিটে গা এলিয়ে দিয়েছিল। চোখটা তখন ধরে এসেছিল তার।
হঠাৎ আলী আজিমভের ডাকে তন্দ্রার ভাবটা কেটে গেল আহমদ মুসার।
চোখ মেলে তাকাতেই তার চোখ গিয়ে পড়ল সোজা সুড়ঙ্গের মুখে। দেখল, স্টেনগান হাতে দু’জন দাঁড়িয়ে সুড়ঙ্গের মুখে একদম রাস্তার উপর। দীর্ঘকায় দু’জন লোক। কাল ওভারকোট ওদের হাঁটুর অনেকখানি নিচ পর্যন্ত নেমে গেছে। মাথার হ্যাট কপাল পর্যন্ত নামানো।
ওরা তো পুলিশ নয় দেখছি। বলল আহমদ মুসা।
জ্বি, ওরা পুলিশ নয়। বলল ওসমান এফেন্দী।
যেই হোক, ওরা আমাদেরকে বড় রকমের কিছু সন্দেহ করেনি। ওদের স্টেনগানের মাথা নিচের দিকে নামানো।
বলতে বলতে জীপটি সুড়ঙ্গের মুখে এসে পড়ল।
আহমদ মুসা তার মাথার হ্যাটটা কপালের উপর আরেকটু টেনে দিল।
সুড়ঙ্গের মুখেই রাস্তার মাঝখানে ওরা দাঁড়িয়েছিল। দু’জনেই তারা তাকিয়েছিল গাড়ির দিকে।
জীপ একদম ওদের প্রায় গা ঘেঁষে দাঁড়াল। গাড়ি দাঁড়াতেই দু’জনের একজন ধীরে হেঁটে গাড়ির পাশে চলে এল। ওদের স্টেনগানের মাথা তখনও নিচে নামানো।
লোকটি ওসমান এফেন্দীর জানালার পাশে এসে বাম হাতটা জানালার উপর রেখে মাথা নিচু করল। তার ডান হাতে ঝুলছে স্টেনগানটি।
ওসমান এফেন্দী জানালা দিয়ে মুখ বের করে বলল, কি ব্যাপার?
তার কথায় উত্তর আর্মেনিয়ার আঞ্চলিক ভাষার টান।
তোমরা আসছ কেত্থেকে? বলল লোকটি।
বাকু থেকে। বলল ওসমান এফেন্দী।
যাবে কোথায়?
ইয়েরেভেন।
থাক কোথায়?
ইয়েরেভেন।

The author saimumseries has offered the item for free, you can now download it.

Download
License Option
Quality checked by SoaTube.com
Full Documentation
Future updates
Author Support
2 Downloads

SaimumSeries's items

We use cookies to personalize your experience. By continuing to visit this website you agree to our use of cookies

More